একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামান আজ ৮০ বছর পরিপূর্ণ করে ৮১তে পা রাখছেন। জীবনের এই লগ্নে তার মেয়ে ডা. তানিরা তার সঙ্গেই আছেন। ৮০ বছরপূর্তিতে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই পারিবারিকভাবে।
আবার দিলারা জামানের মনটাও এ মুহূর্তে ভীষণ খারাপ। কারণ সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ভীষণ দুর্ভোগে আছে। তিনি দোয়া করেন যেন এই পরিস্থিতি আল্লাহ দ্রুত সমাধান করে দেন। এদিকে আজ জন্মদিন উপলক্ষে দুপুর ১২.৩০ মিনিটে চ্যানেল আইতে ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দীর্ঘদিন যাবৎ দিলারা জামান মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন।
এখনো টিভি নাটক ও সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি। তিনি যখন অভিনয় শুরু করেন, তখন বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল। প্রতিকূলতার সব বাধা পেরিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন। আজকে সমাজে শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সামান্য হলেও তার কিছুটা অবদান আছে।
নারীমুক্তির পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার চেতনাকে ধারণ করে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনার পাঠ শেষ করে তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। নিভৃতচারী কথাশিল্পী হিসেবেও তার একটা পরিচিতি আছে। ১৯৯২ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
মুরাদ পারভেজ পরিচালিত ‘চন্দ্রগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৫৭ সালে স্কুলে তিনি প্রথম নাটক করেন মঞ্চে। শরৎচন্দ্রের ‘মামলার ফল’। ১৯৬৩ সালে তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তখন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে একাঙ্কিকায় অভিনয় করেন কাজী দিশু ও সাংবাদিক আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফার সঙ্গে।
একই বছর আলাউদ্দীন আল আজাদ রচিত ‘ডাকসু’র নাটক ‘মায়াবি প্রহর’-এ অভিনয় করেন। ১৯৬৬ সালে প্রথম নাজমুল আলমের রচনায় ও আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় রেডিওতে প্রথম নাটক করেন। টেলিভিশনে তিনি প্রথম নাটক করেন ১৯৬৭ সালে খান জয়নুলের লেখা ‘পিনিস’ নাটকে। পরিচালক ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
হুমায়ূন আহমেদের নির্দেশনায় প্রথম ১৯৮৪ সালে ‘দিনের শেষে’ নাটকে অভিনয় করেন। জন্মদিন প্রসঙ্গে দিলারা জামান বলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো উচ্ছ্বাস নেই। তবে এত বছর পেরিয়েও আলহামদুলিল্লাহ্ সুস্থ আছি, ভালো আছি— এটাই আসলে অনেক ভালো লাগার। অভিনয় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু এই সম্মাননার চেয়ে কোটি কোটি মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি— এটাই আসলে সত্যিকারের অর্জন। ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই আমি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।